অনলাইন মিডিয়ার বিরূপ প্রভাব এবং করনীয় এবং বর্জনীয়

আমাদের আদরের সন্তানের কিছু সহজ কথা, মা বাবা বললে মাথায় ঢুকে না, কথাটা যে শুনা দরকার সেটাও মনে করেনা, কিন্তু সেই একই কথা যদি ফেসবুক, ইউটিউবের কোন সেলিব্রেটি বক্তা বলে, তখন দেখবেন আপনার ছেলে এম্নিই শুনছে, ঐ কথা শুনা পর থেকেই, সেই ঐ কাজটা করবেই, যেমন- কোন সেলিব্রেটি আয়মান আজাদ (কাল্পনিক নাম) বলল , “ভাই ফজরের নামাজ অবশ্যি পড়বেন” অথবা বলল ভাই “প্রতিদিন কোরআন থেকে একটা সুরা অবশ্যই পড়বেন”, তখন দেখা যাবে আপনার আদরের ছেলে বা মেয়েটি , এই কথা শুনার পরের দিন থেকেই ফজরের আগেই ঘুম থেকে উঠে বসে আছে! নামাজ পড়তেছে !আবার কোরআন তেলাওয়াত করতেছে!! আপনি মনে মনে বললেন ভালই ত! আপনার ছেলে তো ধার্মিক হয়ে গেছে! ভাল হয়ে গেছে!! আপাতত দৃষ্টিতে সব কিছু ভালই মনে হচ্ছে। এবার আসেন পরের সিকুয়েন্সে যাই!

 

এবার ঐ একই বক্তা বা অন্য কোন সেলিব্রেটি কিছু দিন পর বলল, ধর্ম বলে কিছু নাই ! বা সব একই !! সব জায়গায় যেয়ে এবাদত করা যাবে!! তখন আপনার সন্তান দেখা যাবে এইটিও মনে প্রানে বিশ্বাস করে ফেলবে! যে কিছুদিন আগে ফজরের নামাজ পরেছে, সেই আপনার সাথে তর্ক করে বলবে ,আল্লাহ, ঈশ্বর আর ভগবান একই!! বা এরা কেউ নেই!!

জী , এবার আপনার মাথায় চিন্তার রেখা পড়বে!! এই সিকুয়েন্স টা ত সব মজাই নষ্ট করে দিল!!

 

এবার বলি এত গুলো কাহিনী কেন লিখলাম! দেখেন বর্তমান ফেসবুক, ইউটিউব এর যুগে সব সময় আমাদের মন মানুসিকতা, ভাবনা, ব্যাক্তিত্ব পরিবর্তন হচ্ছে, বা হারাচ্ছে! কি কথাটা একটু অন্য রকম শুনাচ্ছে ! শুনালেও একদম সত্যি। অর্থাৎ আপনি যদি অতি মাত্রায় অন লাইন মিডিয়াতে থাকেন, তাহলে আপনার মস্তিষ্ক বার বার আপনার স্মৃতি সেল এ এগুলোর একটা প্রভাব ফেলবে। এভাবে একটা সময় আপনার ব্যক্তিত্বও এর দ্বারা আপনার অজান্তেই পরিবর্তন করে ফেলবে!! কারন সত্য মিথ্যা যেটাই আমরা বার বার শুনবো সেটা একটা সময় পুরোপুরি আমি বিশ্বাস করে ফেলব, হতে পারে সেটা মিথ্যা ছিল,কিন্তু বার বার শুনার জন্য ওটাকেই আমি সত্য ভাবছি!

 

সমাধান কি?

কেমন যেন অন্যরকম লাগছে কথা গুলো না! এর সমাধান কি? বা আমি বা আমার সন্তান এর থেকে কিভাবে বাঁচবো? খুব কঠিন হবে কি বাঁচা? অবশ্যই অনেকের জন্য কঠিন হতে পারে বইকি! আসেন এবার দেখি, কি সমাধান কি?

  1. ফেসবুক বা ইউটিউব কে ধর্মীয় গ্রন্থ বা আসমানি কিতাব মনে করা যাবেনা! অর্থাৎ এখানে যারা কথা বলেন তাদেরকে নবি রাসুল বা মহাত্মা বা মহাপুরুষ মনে করা যাবেনা!! এক কথায় বললে, এদের কথা বিশ্বাস করা যাবেনা , পরিপূর্ণ যাচাই ছাড়া। এমনকি পুরোপুরি যাচাই না করে তা সেয়ার বা প্রচার করা যাবেনা।
  2. মূলত এই সোশ্যাল মিডিয়াতে তারাই ভুল করে বা ফাঁদে পা দেয় ,তারাই যারা দ্বীন-দুনিয়া সম্বন্ধে খোঁজ খবর কম রাখে,বা জ্ঞান অল্প-স্বল্প থাকে (বেশির ভাগ ক্ষেত্রে –তবে ব্যতিক্রম থাকতে পারে)। ইংরেজিতে একটা কথা আছে- “A little learning is a dangerous thing” । মূলত অল্প বিদ্যা ভয়ংকরি, এই কারনে অন্ধ বিশ্বাস চলে আসে, বক্তার উপর। তাই যার যার ধর্ম সেটা সম্পর্কে আগে জেনে মানার চেষ্টা করুন।
  3. বাবা-মা হচ্ছেন শিশুর সবচেয়ে বড় শিক্ষক। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখ জনক হলেও সত্য বর্তমান প্রজন্মের সন্তানরা বিশেষ করে যারা একবিংশ শতাব্দী (২০০০ সালের পর) জন্মেছেন। বেশির ভাগরই চিন্তা ভাবনা হচ্ছে এদের মা-বাবা এদেরকে বুঝতে পারেনা? এদের কোন কিছুতেই পিতামাতা সাপোর্ট করেন না! এমনকি অনেক মা বাবাও মনে করেন যে উনাদের সন্তানদের কে উনারা প্রপারলি সাপোর্ট দিতে পারছেননা। প্রপারলি সাপোর্ট দিতে পারবেন ফেসবুক বা ইউটিউবের “আয়মান আজাদ” রা! আরে কমন সেন্স কাজে লাগান ভাই! মা বাবা জদি সন্তান কে না বুঝে ,তাহলে সেটা কি ফেসবুক বা ইউটিউবের ঐ বক্তা বুঝবে?! একই ভাবে আপনি যদি সন্তান হয়ে নিজের বাবা, যিনি আপনার ছোট থেকে প্রয়োজন মেটাচ্ছেন, মা যিনি নিজের জীবনের থেকেও আপনাকে বেশি ভালবাসেন, তার কথা আপনি বিশ্বাস করেন না! বিশ্বাস করেন “আয়মান আজাদের কথা”! তাই কাউকে পীর না মেনে নিজের মা বাবা কে পীর মানুন কোন সময় ঠকবেন না।

 

যাই হোক কথা গুলো মূলত, কিছু অভিজ্ঞতার আলোকে , নিজের এবং আশে পাশের কিছু মানুষের কিছু ঘটনা থেকে লেখা। লেখাটার সারমর্ম হচ্ছে- নিজেকে অতিমাত্রায় ফেসবুক বা ইউটিউবে যাতে আমরা নিয়োজিত না করি, বিশেষ করে আমাদের সন্তানদেরকে এই মিডিয়া গুলোকে প্রয়োজনে ব্যবহার করতে শেখাই। কাউকে বা কোন গোষ্ঠী কে বা কোন ধর্মকে খাট করার জন্য লিখা হয়নাই। তারপরও একান্ত কেউ যদি গায়ে মেখে থাকেন, অগ্রিম ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি, যাতে গায়ে না মাখেন!

 

এতক্ষন ধরে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *