ঈদের সুন্নাহ আদায় এবার একদমই সহজ হবে!
আমরা সবাই ঈদ প্রতি বছর যেভাবে করি এবার সেভাবে করার প্ল্যান করলেও খুব একটা সুবিধা করা যাবেনা, কারণ কিছু “করোনা পরবর্তী বিধিনিষেধের” বেড়াজালে আবদ্ধ আমরা। তাই চাইলেও এবার নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেছে, চিন্তা করছি, কিভাবে এবার ঈদে মুয়ানাকা মানে কোলাকুলি না করে কাটাবো! ওহ! আল্লাহ জানেন কিভাবে হবে সেটা!! আরেকটা চিন্তা ঈদের নামাজ কিভাবে আদায় করবো? তবে যেহেতু আল্লাহর রহমতে মাসজিদ খুলে গেছে, তাই এবার ঈদের জামাত মনে হয় না ঈদগাহে হবে। সেই যাই হোক তা যথাসময়ে জানা যাবে।
মুলত আজকে ঈদে কিভাবে সময় কাটাতে পারেন সেই বিষয়ে আলোচনা করা উদ্দেশ্য না, কারণ এটা যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার, চাইলে পুরা দিন ঘুমিয়ে কাটাতে পারেন! আবার তার ছেড়ার মত বেড়াতে পারেন! আবার একমাস রোজার সিয়াম রেখে রাক্ষসের মত খেয়ে পেট খারাপ করে ফেলতে পারেন! So, It’s up to you!
তবে যেহেতু এটা শরিয়ত সম্পৃক্ত ব্যাপার, প্রথমে ঈদের দিন কি কি করা উচিত বা করা যায় , তা জানলে কেমন হয়? আসলে না জেনেও উপায় নাই! নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শাওয়ালের চাঁদ দেখার পর থেকে ঈদের সারাদিন কিছু কাজ করতেন, যেগুলো সুন্নাহ হিসেবে আমাদের অত্যন্ত জরুরি ভাবে করা উচিত, কিন্তু স্বাভাবিক ঈদের ক্ষেত্রে এগুলোর দুই একটি ছাড়া বেশীর ভাগ ই আমাদের করা হয়ে উঠেনা। এগুলো হলঃ
ঈদের রাত্রে বিশেষ এবাদত বন্দেগীঃ
নবী করীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি ঈদের রাতে জাগ্রত থেকে ইবাদতে নিমগ্ন থাকবে তার অন্তর সেই দিনও মৃত্যু বরণ করবে না যে দিন সকলের অন্তর মৃতপ্রায় হয়ে যাবে। (সুনানে ইবনে মাজাহ হাদীস নং-১৭৮২)
তাই রমাদানের বেজোড় রাত্রের মত ঈদের রাত্রেও অত্যন্ত পক্ষে নুন্যতম কিছু এবাদত যেমন- তাহাজ্জুদ নামাজ, জিকির আসগার ইত্যাদি সহ বিশেষ দোয়ার এহতেমাম করা উচিত।
ঈদের সুন্নাতসমূহ
১. অন্য দিনের তুলনায় সকালে ঘুম থেকে উঠা। (তাহতাবী আলা মারাকিল ফালাহ-২৮৫৯, বাইহাকী হাদীস নং-৬১২৬)
২. মিসওয়াক করা। (তাহতাবী আলা মারাকিল ফালাহ-২৮৯)
৩. গোসল করা। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নাম্বার-১৩১৫)
৪. শরী‘আত সম্মত সাজ-সজ্জা করা। (সহীহ বুখারী শরীফ হাদীস নাম্বার-৯৪৮)
৫. সামর্থ অনুযায়ী উত্তম পোষাক পরিধান করা। উল্লেখ্য, সুন্নাত আদায়ের জন্য নতুন পোষাক জরুরী নয়। (তাহতাবী আলা মারাকিল ফালাহ-২৮৯)
৬. সুগন্ধি ব্যবহার করা। (আদ্দুররুল মুখতার-২/১৬৮)
৭. ঈদুল ফিতরে ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে মিষ্টি জাতীয় জিনিস, যেমন খেজুর ইত্যাদি খাওয়া। তবে ঈদুল আযহাতে কিছু না খেয়ে ঈদগাহে যাওয়া এবং ঈদের নামাযের পর নিজের কুরবানীর গোশত দ্বারা আহার করা উত্তম।(সহীহ বুখারী হাদীস নং-৯৫৩, আদ্দুররুল মুখতার-২/১৬৮)
৮. সকাল সকাল ঈদগাহে যাওয়া। (সুনানে আবু দাউদ হাদীস নাম্বার-১১৫৭)
৯. ঈদুল ফিতরে ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে সাদাকায়ে ফিতর আদায় করা। (আদ্দুররুল মুখতার-২/১৬৮)
১০. ঈদের নামায ঈদগাহে আদায় করা সুন্নাত। বিনা উযরে মসজিদে আদায় করা উচিত নয়। (সহীহ বুখারী হাদীস নাম্বার-৯৫৬)
১১. যে রাস্তায় ঈদগাহে যাবে সম্ভব হলে ফেরার সময় অন্য রাস্তা দিয়ে ফেরা। (সহীহ বুখারী হাদীস নাম্বার-৯৮৬)
১২. পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া। (তাহতাবী আলা মারাকিল ফালাহ-২৯০)
১৩. ঈদুল ফিতরে ঈদগাহে যাওয়ার সময় আস্তে আস্তে এই তাকবীর বলতে থাকা (اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ لَا إلَهَ إلَّا اللَّهُ وَاَللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ وَلِلَّهِ الْحَمْدُ)
তবে ঈদুল আযহাতে যাওয়ার সময় এই তাকবীর উচ্চস্বরে পড়তে থাকবে। (বাইহাকী হাদীস নং-৬১৩০)
কিছু জঘন্য কাজঃ
আমাদের সচরাচর অন্যান্য ঈদে আমরা কিছু এমন কাজ করি, যেগুলো অত্যন্ত অন্যায় এবং গুনাহের কাজ।যেমনঃ
১। সারা মাস সিয়াম সাধনা করে ঈদের দিন ফজরের নামাজ সহ অন্যান্য নামাজ ক্বাযা করে ফেলি।
২। সুন্নাহের নাম ধরে অতিরিক্ত খাবার দাবারের আয়োজন করে অর্থের অপচয় করি।
৩। ঈদের খুশি উদযাপনের নামে পার্কে, খোলা স্থানে সমবেত হয়ে আড্ডা এবং বেহায়াপনায় মত্ত হই।
৪। লাগাম ছাড়া ঘোড়ার মত ঘুরতে থাকি।
কি করলে আমি নিজেকে এবং সবাইকে নিরাপদ রাখতে পারিঃ
- প্রথমত এবার পুরাপুরি সুন্নাতের উপর আমলের নিয়ত করতে পারি।
- আত্মীয় এবং বন্ধুবান্ধবদের সাথে অনলাইন ঈদ উদযাপন করাই যুক্তিসঙ্গত।
- কোন ভাবেই এবারের ঈদে বাইরে বেড়াতে যাওয়ার প্ল্যান না রেখে, নিজের আশেপাশের মানুষের খবর নেয়াটাই যথেষ্ট হবে।
- এই ঈদে কিছু ভাল কাজ হিসেবে এলাকার পরিচিত খেটে খাওয়া গরিব মানুষটিকে বাসায় দাওয়াত করে খাওয়াতে পারি।
আশাকরি এই কাজ গুলো করার নিয়ত করার সাথে সাথে যথাযথ বাস্তবায়নের দ্বারা এই পরিস্থিতিতে নিজে যেমন নিরাপদ থাকব এবং একই ভাবে ভাল কাজের দ্বারা আল্লাহ সুবহানুতায়ালার রহমত বরকত অর্জনের মাধ্যমে জান্নাত কামাই করতে সক্ষম হব। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে আমল করার তৌফীক দান করুন ,আমীন।